আশুরার থেকে শিক্ষা :-

8 / 100 SEO Score

একটি সূক্ষ্ম বিষয় :

ففي الصحيحين عن ابنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَدِمَ رَسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المدينةَ، فَوَجَدَ اليهود صيامًا يوم عاشوراء، فقالَ لهم رسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «ما هذا اليوم الذي تصومونه؟». قالوا: هذا يوم عظيمٌ، أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ موسى وقومَهُ، وَأَغْرَقَ فِرْعَوْنَ وقومَهُ، فَصَامَهُ موسى شكرًا، فنحنُ نَصومُهُ. فقالرسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : فنحن أحق وأولى بموسى منكم».فصامَهُ رسول اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وأَمَرَ بصيامِهِ. أخرجه البخاري (٢٠٠٤)، ومسلم (١١٣٠).

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনায় এসে দেখলেন যে ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এই দিনটি কী যে তোমরা রোজা রাখছ?”তারা উত্তরে বলল, “এটি একটি মহান দিন, এই দিনে আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) ও তার সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফিরাউন ও তার দলকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তাই মূসা (আ.) কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই দিনে রোজা রাখতেন, আমরাও তা রাখি।”তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “মূসার ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার ও ঘনিষ্ঠ”।এরপর তিনি নিজে এই দিনে রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। (বুখারী: ২০০৪, মুসলিম: ১১৩০)।

এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয় নেয়ামত প্রাপ্ত হলে শুকরিয়া আদায় করা ঈমানী দায়িত্ব।আবার প্রমাণ হয় বিপদ থেকে মুক্তি পেলে বা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন নেয়ামত প্রাপ্ত হলে আমল দিয়ে শুকরিয়া আদায় করা সুন্নাতে আম্বীয়া।এখানে( فَصَامَهُ موسى شكرًا)এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে মুসা আলাইহিস সালাম শুকরিয়া হিসাবে আল্লাহ তায়ালার জন্য রোজা রেখেছেন। আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত প্রাপ্তির পর নবীজি (সা.)-এর উপর যখন এই আয়াত নাযিল হয়: {إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا}”নিশ্চয়ই আমি আপনার উপর একটি গুরু বাণী অবতরণ করব।” (সূরা আল-মুজাম্মিল: ৫)

তখন থেকে রাতের অন্ধকার ঘনীভূত হলে তিনি দুনিয়ার সবকিছুর পিছনে দরজা বন্ধ করে দিতেন। সব ঘটনা, সম্পর্ক, মানুষ—সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে তিনি তাঁর প্রভুর দিকে মনোনিবেশ করতেন। তাঁর সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে তিনি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করতেন, নাযিলকৃত আয়াতগুলো গভীরভাবে চিন্তা করতেন, একাগ্রচিত্তে ইবাদতে মগ্ন হয়ে রাত কাটিয়ে দিতেন—সিজদায় ও দাঁড়িয়ে থাকার মাধ্যমে। এভাবে তিনি রাতের শেষ প্রহর পর্যন্ত ইবাদত করতেন, তারপর আল্লাহ যা দান করতেন, তা দিয়ে দোয়া করতেন। আয়েশা (রা.) লক্ষ্য করতেন যে নবীজি (সা.) এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ইবাদত করতেন যে তাঁর পবিত্র পায়ে ফাটল ধরে যেত এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে পা ফুলে যেত। এ দেখে আয়েশা (রা.)-এর হৃদয় কেঁদে উঠত। তিনি নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন, “لِمَ تَصْنَعُ هَذَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَقَدْ غُفِرَ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ؟ “হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কেন এত কষ্ট করেন, অথচ আল্লাহ আপনার আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন?”

আয়েশা (রা.) যেন নবীজিকে অনুরোধ করছিলেন যে তিনি যেন নিজের উপর এত কঠোরতা না করেন, একটু বিশ্রাম নেন। যেহেতু আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাহলে এত কষ্টের কী প্রয়োজন? নবীজি (সা.) উত্তরে একটি গভীর হিকমতপূর্ণ বাণী দিলেন, যা মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে এবং তাকে আরও উঁচু স্তরের দিকে আহ্বান করে। তিনি বললেন, فَقَالَ: (أَفَلَا أُحِبُّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا؟)””আমি কি শোকরগোজার বান্দা হতে পারব না?”বুখারী (4837), মুসলিম (2820)

কিছু শিক্ষা:

১.শোকর ইমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা অন্তরকে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট রাখে, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত রাখে এবং তাকে প্রশান্তি ও সুখ দান করে।

২. শোকরের গুরুত্ব ও মর্যাদা এত বেশি যে, কুরআন-হাদিসে বহু স্থানে শোকরকারীদের প্রশংসা করা হয়েছে। যেমন: {وَسَنَجْزِي الشَّاكِرِينَ} -“আর আমি শোকরকারীদেরকে অবশ্যই পুরস্কৃত করব।” (সূরা আলে ইমরান: ১৪৫) । {وَلَقَدْ آتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ أَنِ اشْكُرْ لِلَّهِ} -“আমি লুকমানকে হিকমত দান করেছিলাম এই বলে যে, আল্লাহর শোকর আদায় করো।” (সূরা লুকমান: ১২) {بَلِ اللَّهَ فَاعْبُدْ وَكُن مِّنَ الشَّاكِرِينَ} -“বরং তুমি আল্লাহর ইবাদত করো এবং শোকরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।” (সূরা আয-যুমার: ৬৬)

৩. শোকর দুভাবে আদায় করা যায়: – বাক্য দ্বারা: যেমন জিকির-আজকার, আল্লাহর নেয়ামতের স্বীকৃতি দেওয়া। যেমন আল্লাহ বলেন, {وَمَا بِكُم مِّن نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ}”তোমাদের যে সব নেয়ামত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই।”(সূরা আন-নাহল: ৫৩) -আমল দ্বারা: যেমন ফেরাউন এবং তার লস্কর থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মুসা আলাইহি সালাম এর রোজা রাখা, নবীজির দীর্ঘ নামাজ ও তাহাজ্জুদ। আল্লাহ বলেন,{اعْمَلُوا آلَ دَاوُودَ شُكْرًا وَقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ} “হে দাউদ পরিবার! শোকর আদায় করো। কিন্তু আমার বান্দাদের মধ্যে শোকরকারী অল্পই আছে।” (সূরা সাবা: ১৩)

৪. কোনো বান্দা যদি একটি নেয়ামতের শোকর আদায় করতে সারাজীবনও ব্যয় করে, তবুও সে তার হক আদায় করতে পারবে না। আল্লাহ আমাদের সামান্য আমলেই সন্তুষ্ট হন এবং তাঁর অনুগ্রহ ও দয়া দিয়ে আমাদের সাথে আচরণ করেন। তাই আমাদের উচিত বাক্য দিয়ে শুকরিয়া আদায় করার সাথে সাথে, আমল দিয়ে শুকরিয়া আদায় করা। চাই সেটা নফল নামাজ হোক, নফল রোজা হোক বা দান ছদকা করে হোক।

১০ মুহাররম ১৪৪৭০৬ জুলাই ২০২৫

তামজীদ হোসেন জিলানী

মুকিম,বায়তুস সালাম মাদ্রাসা ফটিকছড়ি,চট্টগ্রাম। tamzidhossin2025@gmail.com

| জনপ্রিয় আর্টিকেল

| সাম্প্রতিক আর্টিকেল

মাযহাব নিয়ে সার কথা

মাযহাব মানার অর্থ :মাযহাব মানার অর্থ হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে কুরআন ও হাদীস মানা। মাযহাব নব্য কোন আবিষ্কৃত বিষয় নয়। বরং

কুরবানী ও অর্থনীতি

অতি সামান্য অর্থনীতির জ্ঞান দিয়ে যা বুঝি, বাজারে টাকা বা মুদ্রার ফলপ্রসু কন্ট্রিবিউশন মাপার জন্য দেখা হয় মাল্টিপ্লাইয়ার ইফেক্টকে।  কেন্দ্রীয়

| ক্যাটাগরি

Scroll to Top