ধর্ম যার যার, উৎসব সবার: একটি ধর্মবিরোধী কুফরী স্লোগান

15 / 100 SEO Score

20241012 231103 - সত্যের আলো
Festival, Religion


 

“ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” – এই প্রবাদটি পূজা এলেই সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় তোলে। আমাদের দেশের কিছু সুশীল দাবিদার ও ইসলামবিদ্বেষী সেকুলাররা এই স্লোগানটিকে ব্যাপকভাবে প্রচার করে। তারা বুঝাতে চায়, ধর্মীয় পরিচয় আলাদা হলেও, সবাই মিলে পূজায় অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং উৎসবে নাচানাচি করতে পারবে। যা কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং একথা স্পষ্টভাবে কুফুরির ইঙ্গিত।


অথচ তারা এ স্লোগানটিকে ইসলামে বৈধতা দেওয়ার জন্য কোরআনের সূরা কাফিরুনের ৬ নম্বর আয়াত  “لَكُمۡ دِیۡنُكُمۡ وَلِیَ دِیۡنِ” (লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন) দিয়ে যুক্তি দাঁড় করায়। এটি কোরআনের এই আয়াতের পুরোপুরি অপব্যাখ্যা এবং মানুষের ঈমানের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলার চেষ্টা। যে কেউ এটি বিশ্বাস করে, তার ঈমান ক্ষুণ্ন হতে বাধ্য।

কিভাবে “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” স্লোগানটি কোরআন বিরোধী, কুফরি এবং ঈমান বিধ্বংসী, তা বোঝার জন্য আমাদের জানতে হবে সূরা কাফিরুনের শানে নূযুল।

শানে নূযুল বা কোরআন নাযিলের প্রেক্ষাপট:

(১) ইবনু ইসহাক ও অন্যান্যগণ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, অলীদ বিন মুগীরাহ, ‘আছ বিন ওয়ায়েল, আসওয়াদ বিন আবদুল মুত্ত্বালিব, উমাইয়া বিন খালাফ প্রমুখ মক্কার কাফেরদের বিশিষ্ট নেতৃবর্গ একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে আপোষ প্রস্তাব করেন। তারা বলেন, هلم فلنعبدْ ما تعبد، وتعبدْ ما نعبد، ونشترك نحن وأنت في أمرنا كله- ‘এসো আমরা ইবাদত করি যার তুমি ইবাদত কর এবং তুমি ইবাদত কর যাকে আমরা ইবাদত করি। আমরা এবং তুমি আমাদের সকল কাজে পরস্পরে শরীক হই’। 

 (ইবনু জারীর, কুরতুবী; সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৩৬২)

(২) অন্য বর্ণনায় এসেছে, তারা বলেছিল যে, যদি তুমি আমাদের কোন একটি মূর্তিকে চুমু দাও, তাতেই আমরা তোমাকে সত্য বলে মেনে নিব। তখন জিব্রাইল আলাইহিস সালাতু ওয়াসাল্লাম এই সূরা নিয়ে আগমন করেন এবং তারা নিরাশ হয়ে যায়।

(৩) তারা আরো বলেছিল, তুমি চাইলে আমরা তোমাকে এত মাল দেব যে, তুমি সেরা ধনী হবে। তুমি যাকে চাও, তার সাথে তোমাকে বিয়ে দেব। আর আমরা সবাই তোমার অনুসারী হব। কেবল তুমি আমাদের দেব-দেবীদের গালি দেওয়া বন্ধ কর। যদি তাতেও তুমি রাজী না হও, তাহ’লে একটি প্রস্তাবে তুমি রাজী হও, যাতে আমাদের ও তোমার মঙ্গল রয়েছে। আর তা হলো, তুমি আমাদের উপাস্য লাত, উযযার এক বছর পূজা কর এবং আমরা তোমার উপাস্যের এক বছর পূজা করব। এইভাবে এক বছর এক বছর করে সর্বদা চলবে। তখন এই সূরা নাযিল হয়।

(ইবনু জারীর, কুরতুবী, ইবনু কাছীর)

শানে নূযুলের সারকথা:

কাফেরদের প্রতিনিধি দলের মূল প্রস্তাবই ছিল, চলুন আমাদের ধর্ম এবং আপনার ধর্ম একাকার করে ফেলি। অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় পরিচয় থাকলেও, সবাই মিলে সব ধর্ম পালন করব। উৎসবে মেতে উঠবো। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাদের দেব-দেবীকে মান্য করেন, তবে তারা আল্লাহকে মান্য করবে। আর তিনি যদি তাদের দেব-দেবীর মূর্তিসমূহের পূজা করেন, তবে তারাও তাঁর আল্লাহর এবাদত করবে।

হযরত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ততঃ এক বৎসরের জন্য হলেও এ চুক্তিতে রাজী হউন, এ আগ্রহও তারা প্রকাশ করেছিল। তাদের এ হীন প্রস্তাবের উত্তরে আল্লাহ্ তায়ালা এ সুরা নাজিল করেন। এ সূরা থেকে প্রতিধ্বনিত হয় যে, মিথ্যার সাথে সত্যের কখনও আপোষ হতে পারে না

সূরা কাফিরুনের অনুবাদ:

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ

﴿۱﴾ قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ

১. (হে নবী, আপনি) বলুন, হে কাফিররা

﴿۲﴾ لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ

২. আমি তার ইবাদত করি না, যার ইবাদত তোমরা কর।

﴿۳﴾ وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ

৩. এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি।

﴿۴﴾ وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّم

৪. এবং আমি ইবাদতকারী নই তার, যার ইবাদত তোমরা করে থাক।

﴿۵﴾ وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ

৫. এবং তোমরা তাঁর ইবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি।

﴿۶﴾ لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ

৬. তোমাদের দ্বীন (শিরক) তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন (ইসলাম) আমার জন্য।

আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে তাদের এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন যে, তোমাদের ধর্ম তোমরা পালন কর, আমাদের ধর্ম আমরা পালন করব; দুই ধর্ম মিশ্রিত করে একাকার করে সবাই নিজের উৎসবে নাচানাচি করার কোন সুযোগ নেই।

তবুও, এ যুগের কিছু শয়তানের ধূসররা কাফেরদের প্রস্তাবটিই নবায়ন করে চটকদার স্লোগানে আমাদের সামনে উপস্থাপন করছে “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”।

আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, তারা এই স্লোগানের প্রমাণস্বরূপ সূরা কাফিরুনের ৬ নম্বর আয়াতকে উপস্থাপন করে। যা পুরোপুরি কোরআনকে বিকৃত করে। যদি এটা কেউ জেনে শুনে এবং মনে বিশ্বাস রেখে করে, নিঃসন্দেহে সে কাফের হয়ে যাবে।

এরপরও যেই ভাঙ্গু সেকুলাররা “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” মনে করেন, তাদের প্রতি অনুরোধ রইল, এই স্লোগানটি মুসলিমদের নিম্নোক্ত অনুষ্ঠানগুলোতেও ব্যাপকভাবে প্রচার করুন। দেখুন তো এদেশের অন্যান্য ধর্মাবলম্বনকারীরা সাড়া দেয় কিনা?!

আমাদের কুরবানি/গরুর মাংস খেতে বলুন।

► ঈদের নামাযে আসতে বলুন।

► সবে বরাত, সবে কদর রাতে মসজিদে আসতে বলুন। (এই রাত দুটি এখন উৎসবের পর্যায়ে চলে গেছে, যদিও সেটা ইসলামে মানা রয়েছে।)

এখন বলবেন, এসব তাদের জন্য হারাম, তারা করবে কেন?

আরে, ইসলামে কোথাও কি প্রতিমা পূজাঁ, আল্লাহ ব্যাতীত কাউকে উৎসর্গ করা খাবার হালাল বলা আছে? তো আপনি কি কারণে সেখানে?

কেন শুধু মুসলমানের সন্তানদেরই ভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে ধর্ম নিরপেক্ষতা?

ধর্মনিরপেক্ষতার মানে তো এই নয় যে, নিজের ধর্মকে জলাঞ্জলি দিয়ে সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে সমস্ত ধর্মগুলোকে গুলিয়ে একাকার করে ফেলা।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সহি বুঝ দান করুন। আমীন!

| জনপ্রিয় আর্টিকেল

| সাম্প্রতিক আর্টিকেল

মাযহাব নিয়ে সার কথা

মাযহাব মানার অর্থ :মাযহাব মানার অর্থ হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে কুরআন ও হাদীস মানা। মাযহাব নব্য কোন আবিষ্কৃত বিষয় নয়। বরং

কুরবানী ও অর্থনীতি

অতি সামান্য অর্থনীতির জ্ঞান দিয়ে যা বুঝি, বাজারে টাকা বা মুদ্রার ফলপ্রসু কন্ট্রিবিউশন মাপার জন্য দেখা হয় মাল্টিপ্লাইয়ার ইফেক্টকে।  কেন্দ্রীয়

সত্যবাদিতা ও তার তাৎপর্য

অনেকেই মনে করেন ইসলাম শুধু নামায-রোযা-হজ-যাকাত—এই কয়েকটি ইবাদতের নাম। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, The Complete

| ক্যাটাগরি

Scroll to Top